কোটার শাড়ি কোটার পোশাক (প্রথম আলো)

কোটার শাড়ি কোটার পোশাক (প্রথম আলো)
কোটার শাড়িতে পূজার আমেজ
কোটার শাড়িতে পূজার আমেজমডেল: জলি, শাড়ি: ক্লাব হাউস, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, স্থান: এন’স কিচেন। ছবি: কবির হোসেন

একসময় আমাদের এখানে কোটা বলতে ছিল শুধু শাড়ি। এখন গজ কাপড় হিসেবেও কেনা যাচ্ছে এই কাপড়; বানানো হচ্ছে কুর্তা, কামিজ বা পাঞ্জাবি। উৎসবের সময় গরম থাকলে এই কাপড়ের পোশাকে চমৎকারভাবে তুলে ধরা যায় জমকালো সব সাজ।

আদি যুগের চীনে উদ্ভাবিত খাঁটি সিল্কের শিফন থেকে শুরু করে আমাদের কিংবদন্তি সুতিবস্ত্র মসলিন—যুগ যুগ ধরে নারীর পোশাকে স্বচ্ছ উপকরণের কদরই আলাদা। স্বচ্ছ বস্ত্রের ভাঁজে ভাঁজে আলোছায়ার খেলা তৈরি করে অন্য রকমের এক রহস্য। কোটাও এই ধারার কাপড়। তবে এই ধরনের অন্য কাপড়গুলো থেকে কোটাকে আলাদা করেছে এর চেক প্যাটার্নের বুনন। সিল্ক বা সুতি কিংবা উভয়ের সমন্বয়ে যুগ যুগ ধরে তৈরি হয়ে আসছে অত্যন্ত হালকা এই বস্ত্র। আর এখন তো শুধু সুতি, সিল্ক বা তসর দিয়েও বোনা হয় কোটা কাপড়।

কোটা বস্ত্রের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের রাজস্থানের কোটা অঞ্চলের নাম। শোনা যায়, সেই মহীশুর থেকে বয়নশিল্পীদের নিয়ে এসেছিলেন কোটা অঞ্চলের রাজা রাও কিশোর সিংহ। তাঁদের উদ্ভাবনী নৈপুণ্যেই কোটা কাপড়ের সূচনা। এই ইতিহাসের সূত্র ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক জায়গায় এই বস্ত্রকে কোটা মাইসুরিয়াও বলা হয়। প্রথম দিকে অবশ্য শাড়ি নয়, পাগড়ি হিসেবে পরা হতো কোটা কাপড়। ছোট ছোট চৌখুপি বা চেক প্যাটার্নের বুননের জন্যই কোটার এত কদর। টেক্সচারের জন্যই এটি দেখতেও লাগে ভালো। ঐতিহ্যগতভাবে গর্ত তাঁত বা পিটলুমেই বোনার নিয়ম। একে কোটা দরিয়াও বলা হয়। তবে অন্য অঞ্চলের সঙ্গে যত সংশ্লিষ্টতাই থাক, এপার ও ওপার দুই বাংলাতেই কোটার জনপ্রিয়তা সব সময়ই ছিল। উৎসব বা পার্বণে চমৎকার পাড়-আঁচলের ট্র্যাডিশনাল কোটা শাড়ির তুলনা হয় না। আবার কোটা কাপড়ের কুর্তা বা পাঞ্জাবি হলে উৎসবের সাজে আসবে আভিজাত্যপূর্ণ আমেজ।

কোটার স্কার্ট ও টপে স্মার্ট সাজ
কোটার স্কার্ট ও টপে স্মার্ট সাজপোশাক: যাত্রা

কোটা কাপড়ের ঐতিহ্যবাহী শাড়িগুলো ছাড়াও অনেক বছর ধরে আমাদের দেশে প্রিন্ট, ব্লক, এমব্রয়ডারি বা হ্যান্ডপেইন্টের কাজ করা হয়ে আসছে। কোরা বা সাদা রঙের কোটা শাড়িরও আছে আলাদা আবেদন। সিল্ক ও সুতির কম্বিনেশন থাকায় এই কাপড়ে ভেতর থেকেই একধরনের উজ্জ্বলতা থাকে। একদম নেতিয়ে না গিয়ে খুব সুন্দর ভাঁজ, বাঁক আর কুঁচি দিতে পারে কোটা কাপড়। আবার এ লাইন কাটের ক্ষেত্রেও সুন্দর অবয়ব দিতে পারে এই উপকরণ। জরি কোটাও কিন্তু বেশ জনপ্রিয়। বর্ডারে বা জমিনের মাঝে মাঝে রেখার মতো করে অথবা বুটি হিসেবে জরির বুনন থাকে। শাড়িতে কোটা জমিনের ওপর থাকে নজরকাড়া পাড়, আঁচল, জরি বা সুতার বুটি। প্রিন্ট বা ব্লক করা শাড়িগুলো হালকা বলে যেকোনো আবহাওয়াতেই স্বচ্ছন্দে পরা যায়।

ফুলের ছবি কোটা কামিজের ওপর
ফুলের ছবি কোটা কামিজের ওপরপোশাক: গো দেশি

কোটা শাড়িতে প্রায়ই নজরকাড়া প্রকৃতি বা ফুলের ছবি ক্যানভাস হয়ে উঠতে দেখা যায়। কোটা শাড়ির জমিনে হাতের কাজও খুব নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। ফ্যাশনের ব্র্যান্ড ‘ন হন্যতে’ এমব্রয়ডারি করা কোটা শাড়ি দিয়ে সাজিয়েছে শারদসম্ভার। বর্ণিল সুতার ফুল আর পাতার আদলে করা হাতের কাজের কোটা শাড়িগুলো একই সঙ্গে আভিজাত্যময়, উৎসবধর্মী।

দেখতে হালকা-পাতলা হলেও কোটা শাড়ি বেশ টেকসই। তবে সংবেদনশীল এই বস্ত্র আলাদা যত্ন দাবি করে। এতে মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয় সুতি। বিপরীতে মোটামুটি ৫: ১ অনুপাতে রেশম সুতা ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা বিভিন্ন অনুপাতেই বোনানো হয়। এখন অবশ্য পুরোপুরি সুতি আর সিল্কের কোটাও প্রচলিত। একই সঙ্গে টেকসই আর মোলায়েম—কোটার এই বৈশিষ্ট্য সিল্ক আর সুতির মিশ্র গুণাগুণেরই সমন্বিত ফলাফল। আমাদের দেশে সুতি কোটাই বেশি জনপ্রিয়।

শাড়িতে ছাপা নকশা ও হাতের কাজ
শাড়িতে ছাপা নকশা ও হাতের কাজশাড়ি: ন হন্যতে

শুধু শাড়িই নয়, পোশাকের উপকরণ বা কাপড় হিসেবেও কোটা অনন্য। আমাদের দেশের অনেক ফ্যাশন ব্র্যান্ডই কোটা কাপড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করে থাকে। ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘যাত্রা’য় আছে কোটা কাপড়ের পাঞ্জাবি, কুর্তা, টপ, বটমসহ সব ধরনের পোশাক। চলতি ধারার কাট ও প্যাটার্নে কোটা বস্ত্র এই সংগ্রহে নতুন প্রাণ এনে দিয়েছে বলা যায়। যাত্রার ঠিক পাশেই আছে দেশীয় ফ্যাশনের সমন্বিত উদ্যোগ ‘গো-দেশি’। এখানেও শাড়ি ছাড়াও মিলবে কোটা কাপড়ের বিভিন্ন পোশাক। অনেক উদ্যোক্তার কামিজ, কুর্তা বা টপ ও পাঞ্জাবি সংগ্রহে ব্যবহার করা হয়েছে কোটা কাপড়। আসলে একই সঙ্গে আরাম ও স্টাইল দুটিই দিতে পারে বলে পোশাকে কোটা কাপড়ের সর্বজনীন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন ডিজাইনাররা। এই সময়ে জেন-জি প্রজন্মের প্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর একটি ক্লাবহাউস। তাদের সংগ্রহেও আছে এই চিরন্তন আবেদনের কোটা কাপড়ের পোশাক। কোটা শাড়ির পাশাপাশি এখানে কোটা কাপড়ের পাঞ্জাবিও পাবেন।

দেশি ফ্যাশনকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধারার আধুনিক উপস্থাপনের কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন ফ্যাশন উইকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তরুণ প্রজন্মের ডিজাইনার ও মডেলরা। ফ্যাশনপণ্যে কোটা বস্ত্রের বৈচিত্র্যময় ব্যবহার আমাদের আশাবাদী করে। নিত্যদিনের ব্যবহার থেকে শুরু করে উৎসবের পোশাক আর হাই ফ্যাশনেও কোটা হতে পারে অনন্য। কারণ, এই চৌখুপি বুননের আবেদন অনন্য ও চিরন্তন।

 

 

 

ছবি: ক্লাবহাউস (Klubhaus bd news)

Source:https://www.prothomalo.com/lifestyle/shopping/gtu5lwjrm4


Leave a comment

Please note, comments must be approved before they are published