এবারের ঈদ পড়েছে ভর গরমে। সেটা মাথায় রেখেই নতুন নকশার পোশাক এনেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। ম্যাটেরিয়াল, কাট ও প্যাটার্নেও এসেছে বৈচিত্র্য। ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন আতিফ আতাউর
মডেল : লিয়ানা ও রাজ, পোশাক : ক্লাব হাউজ, সাজ : মীম সাবরীন, ছবি : আবু সুফিয়ান নিলাভ
বসন্ত, বৈশাখ ও ঈদ উদযাপন সব মিলিয়ে পোশাকে ঢিলেঢালা ভাবটাই প্রাধান্য পেয়েছে নকশায়। রঙে হালকা শেড প্রাধান্য পেলেও বাদ যায়নি কোনো রং। জমকালো নকশার জায়গা নিয়েছে প্রাকৃতিক মোটিফের ছাপা।
ঈদ গ্রীষ্ম মিলেমিশে গরমের মধ্যে ঈদ। এর আগে বসন্ত ও বৈশাখ। তাই নতুন পোশাকের নকশায় তিনটি উৎসবকে প্রাধান্য দিতে হয়েছে ডিজাইনারদের। ‘বসন্তের রেশ চলবে আরো কিছুদিন। ঈদের আগে রয়েছে পহেলা বৈশাখ। এর কিছুদিন পর ঈদ। এবার খুব কম সময়ের ব্যবধানে ক্রেতাদের তিনটি উৎসবের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি উৎসব ঘিরে আলাদা নকশার নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্যও সবার নেই। তাই এবার তিনটি উৎসবকে প্রাধান্য দিয়েই পোশাকের নকশা করেছি, যাতে একই পোশাক দিয়ে ক্রেতাদের বসন্ত, বৈশাখ ও ঈদ উদযাপন করতে অসুবিধা না হয়।’ এবারের ঈদ পোশাকের নকশা দিয়ে এভাবেই নিজের অভিমত তুলে ধরলেন বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা।
ঈদ উপলক্ষে এর মধ্যেই নতুন নকশার পোশাক নিয়ে এসেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। এবারের ঈদ পোশাকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্যের দিক। এ জন্য প্রতিটি পোশাকের কাটছাঁটে ঢিলেঢালা ভাব বজায় রাখা হয়েছে। গরমের কথা চিন্তা করে পোশাকে যতটা সম্ভব কম কাজ করা হয়েছে। খুব বেশি জমকালো কাজ করা হয়নি।
এখন ক্রেতারা অনেক সচেতন। তারা ফ্যাশনের পাশাপাশি আরামের দিকটিও নিশ্চিত করতে চায়। এ জন্য টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করে পোশাক তৈরির প্রয়াস চালিয়েছে ফ্যাশন হাউসগুলো। আরামদায়ক উপকরণ দিয়ে ঢিলেঢালা আকৃতির পোশাকের ট্রেন্ড চলছে এই ঈদেও।
এর পরই রয়েছে নান্দনিক নকশা আর জমকালো কাজ। ফ্যাশন হাউস টুয়েলভ ক্লথিং জমকালো ফ্যাশন শোর মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছে ঈদের নতুন পোশাক। রয়েল ডেলিকেসি শিরোনামের পোশাকগুলোতে দেশীয় ও পাশ্চাত্য দুই ধরনের কাটই প্রাধান্য পেয়েছে। উৎসবে অনেকের কাছেই স্বাচ্ছন্দ্যময় ফ্যাশন মানেই পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক। চলাফেরায় আরাম, কাটছাঁটে বৈচিত্র্য থাকায় এমন পোশাক বেশি জনপ্রিয়। এবার ঈদে পাওয়া যাবে এমন পোশাকের সমাহার।
পোশাকে ছাপা নকশা, এমব্রয়ডারি ও কারচুপির কাজে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ডিজাইনার শুভাগত ভট্টাচার্য বললেন, ‘ঈদের পোশাকে সবাই একটু অভিজাত লুকটাই বেশি পছন্দ করে। এ জন্য পোশাকের নকশায় সে প্রচেষ্টাই ফুটিয়ে তুলেছি। নারী, পুরুষ ও শিশু তিন শ্রেণির পোশাকেই নকশা, আরাম ও আভিজাত্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
এবারের ঈদের পাঞ্জাবিতে খাটো ধাঁচটা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে কটির নকশায় এসেছে নতুনত্ব। বিশেষ করে নারীদের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে করা পুরুষদের পাঞ্জাবির কাজ চোখে পড়ছে বেশি। শাড়ির পাড়ের নকশাই উঠে এসেছে পাঞ্জাবির গলায়। এ ছাড়া নারীদের থ্রিপিস, টুপিস, সালোয়ার-কামিজসহ চলতি ধারার সব পোশাকেই কাটিংয়ের বৈচিত্র্য এসেছে।
ঈদ পোশাকে রং নিয়ে বরাবরই মাতামাতি দেখা যায়। পোশাকে নানা নকশা আর বৈচিত্র্যের সঙ্গে রয়েছে রঙের দাপট। সবুজ, আকাশি, নীল, লাল, বাদামি, কমলা, হলুদ, কালো, মেরুন, পার্পল, অনিয়ন, পিংক ও প্যাস্টেল একদম হালকা থেকে শুরু করে গাঢ়—সব ধরনের রংই উঠে এসেছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট, স্কার্টস, পালাজ্জো, টপস, কুর্তি থেকে কাফতানে। পাখি, ফুল, লতাপাতা, জ্যামিতিক নানা মোটিফে কাজ করা হয়েছে। কে ক্রাফটও ঈদ উপলক্ষে ৫০টির অধিক নতুন নকশার পোশাক নিয়ে ফ্যাশন শোর আয়োজন করে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার খালিদ মাহমুদ খান বললেন, ‘ওমব্রে ধারার রঙে ঈদ পোশাকের নকশা করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে হাতের কাজ ও ছাপা নকশা।’
প্রায় সব কটি হাউসই দেশীয় ও পাশ্চাত্য দুই ধারায়ই সাজিয়েছে ঈদের পোশাক। সিল্ক, হাফসিল্ক, সুতি, নিট, ডেনিম, জর্জেট, লিনেন, মসলিন, জামদানি, অরগ্যান্ডি, ভিসকস, সাটিন ও ক্রেপ কাপড়ে তৈরি করা হয়েছে ঈদের পোশাক।
ছবি: ক্লাবহাউস (Klubhaus bd news)
Source: https://www.kalerkantho.com/feature/a2z/2023/03/20/1262834